Sunday, 2 December 2018

সুজয়ের পাঠানো ছোটবেলার kaleidoscope, WhatsApp এ পেয়েছিল, ১লা ডিসেম্বর, ২০১৮

কত কিছু বদলে গেল -  সময় গাড়ী চড়ে

তখনও আসতো শীত - কমলা লেবুর গন্ধে ভাসত ছোটো টিফিন বক্স । অ্যালুমিনিয়ামের স্কুল বাক্স, যেটা দিদি ও কিছুদিন ব্যবহার করেছিল।  ইলাস্টিক ঢিলে হয়ে যাওয়া মোজা র ওপর স্কুল ছুটির ধুলো লেগে থাকতো। এক সাইজ বড় হয়ে যাওয়া মাসতুতো দাদার পরা সোয়েটার এ বারণ ছিল না ইস্কুলের। আমরা বাঙলা পড়তাম , কাঠের বেঞ্চে হলুদ বাল্বের আলোয় । ভূগোল ছিল -গুগল ছিল না। প্রতি শীতে বাবার সাথে চিড়িয়াখানা যাওয়া, কাগজে জেমিনি সার্কাসের আগমনী, সারাদিনের খালি পায়ের কপিলদেব এর  ক্লান্ত পা 'কামড়াত' - রাত্রি হলে লেপের তলায়।
মাফলার সোয়েটার পরে বাবার অফিস বেরনোর পর শুরু হতো আবার একটা মজার দিন।

তখনও আসতো গ্রীষ্ম - রোদ জ্বলা দুপুরে - সুর তুলে নূপুরে - 'কাজের মাসি' আসতো, ফেরিওয়ালা র ডাক - মাটির কুঁজো, লক্ষীর ভাঁড় , হরলিক্সে র কাঁচের বয়ামে লাল কালো মলি মাছ। ভাতের পর একটা হিমসাগর এর চোখলা। অনেক কিছু ছিলনা - গাড়ি ছিল না, বড় বাড়ি ছিল না, টিভি, ফ্রিজ ,মাইক্রো ওয়েভ ,এ সি ছিল না । ছিল রেডিও তে কিশোর কুমার, বড় উঠোন, একটা নীল আকাশের মালিকানা - ঘুড়ি লাটাই। জানলা খোলা দখিনা হাওয়া।

বর্ষা এলে আরও মজা। কাদার তলায় ফুটবল, রোজ হাত পা কাটা র ওপর 'লাল' ওষুধ। রথ সাজানোর প্রস্তুতি। খিচুড়ি র সাথে ডিম ভাজা। কোনও কোনও দিন এক টুকরো ইলিশ। একটা করে ফুল ছাপ দেওয়া রেনকোট আসত, আর ডাক ব্যাগের জুতো। বৃষ্টির মধ্যে রেনকোট পরে হাঁটলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হতো।

সব বড় তাড়াতাড়ি হারিয়ে গেল ।
লক্ষ্মী পুজোর লুচি নারকোল নাড়ু, দোলের লাল নীল চিনির 'মঠ'। সেই হিমসাগর, হাঁসের ডিম। রবিবার এর হিসেব করা দু পিস পাঁঠার মাংস ,বড় দুটো আলু দিয়ে এক থালা ভাত । ছাতা নিয়ে ভিজে বাড়ি ফেরা বাবার হাসি মুখ, গ্রাজুয়েট মা এর অভিযোগ ছাড়া সারা জীবন রান্না ঘরে কাটিয়ে দেওয়া । ছোট বেলার মাষ্টার মশাই কে দেখলে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম । ল্যাপটপ, ফেসবুক -হোয়াটস অ্যাপ এসে মুছে দিয়েছে - বিজয়ার প্রনাম, দোলের মিষ্টি, বৈশাখের মিহিদানা ।
বারমুডা টিশার্টে ঢেকে গেছে - পাজামা পাঞ্জাবী । ঘরে ঘরে বরফ টুকরো গ্লাস এ বোতল এর নেশা , চিকেন কাবাব , বিশাল দেওয়াল টিভি, হোম ডেলিভারি  মুছে দিয়ে গেল - ওই সাদা মাটা দিন গুলো।

সেদিন অনেক কিছু ছিলনা, আবার অনেক কিছু ছিল। জীবন ছিল, আবেগ ছিল - একটা বুক আর একটা মন ছিল।
আয়না তে দেখলে নিজেকে দম দেওয়া যন্ত্র-মানব মনে হয় - সব পেয়ে সব হারানো মানুষের প্রতিনিধি ।
(সংগৃহীত)
* এই লেখা আমার নয়। আজকে সকালে আমার এক বন্ধু এটি আমাকে পাঠায়। মেসেজটা পড়ার পর মনে হল এর সঙ্গে আমার অতীত জড়িত। সেই সঙ্গে জীবনের হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছু চোখের সামনে এলোমেলো হয়ে ভেসে এল।

----------------------------------------
লেখাটার নীচে সুজয় নিজেই লিখেছিল:
Ei lekha gulo jodio ek rokom hoye jachche


তাতে অমরজ্যোতির মন্তব্য:
তাও পড়ি..... ভালো লাগে..... একটু অনুতাপ..... অনুশোচনা.... আত্মতুষ্টিও কি? হতে পারে......

1 comment:

  1. এরকম লেখা মাঝে মাঝেই পাওয়া গেলেও, পড়েই আমাদের সেই বেলাতে মানসভ্রমণে চলে যাই। সুজয়ের লেখা জেনে আরো একবার পড়লাম। (সংগৃহীত) লেখা কেন?

    ReplyDelete

Note: only a member of this blog may post a comment.