Wednesday, 28 November 2012

সেনসাহেবের ডাইরী থেকে

সুজয়ের ডাইরী থেকে পাওয়া কবিতা, সংগ্রাহক কোলা। কবে, কোথায় লেখা হয়েছিল কোলা জানায়নি।

হাজার বছর ধরে আমি নেশা করিয়াছি,
পৃথিবীর পথে-ঘাটে অথবা নদীর নরম পলি তে,
সিংহল সমুদ্র থেকে হিমালয় পাদদেশে
পার্ক স্ট্রীট এর আলো-আঁধারীর অলি-গলিতে।

{
গেছিলাম সায়েন্স কলেজে খুঁজতে শান্তি
পাই নি সেই কালো হরিণ চোখে,
ফিরে এসে গেছিলাম বোতল নিয়ে বসে।
}                                                 সন্জীবের সংযোজন

রাম, হুইস্কি, বাংলা অথবা চুল্লুর ধূসর জগতে
সেখানেও আছি আমি
আরো দূর অন্ধকার খালপাড়ে আমি ক্লান্তপ্রাণ এক মাতাল
চারিদিকে জীবন-উন্মাদ নেশার কোলাহল,
আমায় দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল শকুন্তলার ছুঁয়ে দেওয়া
একটি ঠান্ডা বীয়ারের বোতল।

Saturday, 24 November 2012







দোর্দন্ডপ্রতাপ সেনসাহেবের সাথে ওনার কাশ্মীরযাত্রার প্রাক্বালে, কলকাতা এয়ারপোর্টে। ওনার সিকিউরিটি স্টাফদের অনেক অনুনয় করার পর অনুমতি মিলেছিল।

ভিতরের খবর: এক্সট্রা মালের জন্য ভাড়া গুনতে হয়েছিল ওনাকে, যার শতকরা ৭০ ভাগ ছিল বিভিন্ন ধরনের মালের বোতল!

রোমান্টিকোলা!





নৈণিতালের লেকে নৌকাবিহার করছেন শ্রীমতি ও শ্রী কোলা (সমাস: কোলাকুলি)। সময়টা বোধহয় ২০১১ সাল। লক্ষ্যনীয় যে কোলা কোন লাইফজ্যাকেট পরে নি। পদার্থবিদ্যাগত (archimedes' principle) কারণে ওর দরকার পরে না বোধহয়! :-)

কোলাকে জিগ্গাসা করেছিলাম এইরকম রোমান্টিক expression টা ও মুখের ওপর নিয়ে এল কি করে। ও বিনয়ের সাথে জানাল যে চিত্রনির্দেশকের direction টা শুধু যথাযথভাবে পালন করেছে মাত্র।

Thursday, 15 November 2012

কোলার জন্মদিনের কবিতা: প্রতি-উপহার

আজ ১৫ই নভেম্বর,২০১২ কোলার জন্মদিন। শুভেচ্ছা জানিয়ে মেল করেছিলাম।

" আমাদের ঠেক-র অন্যতম গল্পকার, কবি, ঠেক থেকে কলকাতা ফুটবল লীগে পাঠানো একমাত্র খেলুড়ে এবং ডেনিস লিলির সুযোগ্য ও স্বনামধন্য ছাত্র, শ্রী কোলা সেন-র জন্মদিনে রইল আমাদের সক্কলের তরফ থেকে, অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। "‌‌

তার উত্তরে কোলা এই কবিতাটা পাঠিয়ে দিল:

----------------------------------------------------------------------
আমি বহুদিন বাদে আবার বেগুণি হলাম ...
তারপর সূর্যোদয়ের আকাশ হলাম ...
সেই বিকেলে ভোরের ফুল হলাম ...
নিঝুম সন্ধ্যায় - দক্ষিনের বাতাস হয়ে,
কার ঠোঁটে গানের কলি ছুঁয়ে গেলাম।
নিশুতি রাতে ইরা নক্ষত্র হলাম ...
তোমার চেখের আলো বকের ডানা থেকে 
ধার করে নিলাম ...
তারপর শিউলির বুকে শিশির হয়ে তোমার ঘুম ভাংগালাম ...
আমি আবার বেগুণি হলাম।

-- কোলা 

পুন:  শালা, গীটার থাকলে গান বানিয়ে ফেলতাম; CATCH LINE হতো - 'আমি বেগুণি হলাম'

------------------------------------------------------------------------------------------------

আমার সংযোজন -  আফশোষের কথা, কোলার কবিতার শব্দচয়নে মনভরানো মাধূর্য আছে; কিন্তু ওর অপরিসীম ইচ্ছা ও চেষ্টা সত্বেও কোলার গানটা কালোয়াতিই রয়ে গেছে। তাই, গীটারটা হাতের কাছে না থাকাতে বোধহয় ভালই হয়েছে :-)

-- নির্মাল্য

Wednesday, 26 September 2012

নগরের যানবাহন!

 কিছুদিন আগে এই উদ্ধৃতিটা tweet করেছিলাম; পরে ফেসবুকেও তুলে দিয়েছিলাম; এখন মনে হল ঠেকের সাথে আলাদা ভাবে share করি। এত সত্যি কথা কিন্তু কি সহজভাবে বলা! ভারতবর্ষের জন্য তো যথাযথভাবে প্রযোজ্য:

"A developed country is not a place where the poor have cars. It's where the rich use public transportation." Mayor of Bogota (Columbia)

লন্ডনে টিউবরেল-এ শহরের মেয়রের পাশে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে; NIITর বন্ধু সুদীপ্ত (ঠেকে বারকয়েক এসেছে) চিনিয়ে দিয়েছিল। ডাবলিনে দেখেছি শহরের মেয়র পারিষদের সভ্য-সভ্যারা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে লোকজনের সাথে কথা বলছেন, practical problems কি কি হচ্ছে জানতে এবং সাথে ঠাট্টা-ইয়ারকিও চলছে। মিউনিখ থেকে ফ্রাংকফুটের overnight ট্রেনযাত্রাকালে দেখেছি কোন এক উচ্চপদস্থ রেল-আধিকারিক ও তার সহকর্মীরা আমারই পাশে বসে কফি ও সিগারেট সহযোগে আলোচনা করছেন, সংগে ট্রেণের Chief Conductor!

উন্নত নয়, উন্নয়নশীল দেশ হয়ে থেকে যাওয়াটাই বোধহয় আমাদের ভবিতব্য!

Sunday, 19 August 2012

ঠেলায় প'ড়ে কবিতা লেখা!

তোরা কেউ জানিস কি না জানি না, 'নিখিল ভারত বংগীয় সাহিত্য সভা' (নিভাবসাস) বলে একটা সংস্হা আছে, যারা বাংলা ভাষার চর্চার প্রসারে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, বিশেষ করে প্রবাসী বাংগালীদের মধ্যে। অনেক পুরনো এই সংস্হার সাথে কবিগুরুও যুক্ত ছিলেন শুনেছি; এখনকার রাষ্ট্রপতি বোধহয় চেয়ারম্যান এমেরিটাস। পুণাতে এই সংস্হার শাখা খোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন শ্রী সূর্য সেনগুপ্ত নামে একজন পুণাবাসী। নাট্যজগতে প্রচুর নামডাক আছে; আগে BNP Paribas (Banque Nationalie De Paris, কলকাতায় রাজ্যপালের বাসবভনের কাছে অফিস ছিল - আমার মনে আছে) নামে একটি ফরাসী ব্যাংকের উচ্চপদস্হ অাধিকারীক ছিলেন। এখন মাতৃভাষার প্রসারে অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিমাসে একটা সাহিত্যসভা হয়, ই-ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়; সম্প্রতি একটি ব্লগ জাতীয় ক্রোড়পত্র বার করতে উঠেপ'ড়ে লেগেছেন। আমার পিছনে প'ড়েছিলেন যে প্রথম ক্রোড়পত্রে একটা কিছু লিখতেই হবে। সকাল-সন্ধা ফোন, টেক্সট! কি বিভ্রাট রে বাবা! এক রবিবার বিকেলে ব'সে কয়েক লাইন লিখে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিমাশ্চর্যম! দেখি ছাপিয়েও দিয়েছেন। তোদের ছড়াটা পাঠালাম।

ব্লগল্প
------

ভোরবেলাতে চা-কাপ হাতে,   e-মেল খুলে দেখি,
মাতৃভাষায়  e-শাসানি, ভীষন কেলো এ কি!

নিভাবসাসের ক্রোড়পত্রে দিতেই হবে লিখে,
নইলে পরে জোর প্যাঁদানি, থাকবে না প্রাণ টিঁকে।

করব কি যে ভেবেই আকুল, বিদ্যাদেবীর কাছে,
কান্নাকাটি করতে বসি, উপায় কি আর আছে?

ভাষায় আমার নেই যে দখল, লিখব আমি blog?
আগের ক'বার ফেল করেছি, প্রচুর করেও slog!

ইংরেজী টা নড়বড়ে ভাই, বাংলাটাতেও কাঁচা,
Key-board ধরেই হাত-পা কাঁপে, করব কি যে চাচা!

শেষটা ভাবি, দূ: শালা ছাই, কপালে যাই থাক,
বলেই ফেলি, এক্কেবারেই রেখে No রাখ-ঢাক।

যতই আমায় ফেলুন চাপে, সূর্য্য সেনগুপ্ত,
এর বেশী আর পারব না কো, এবার হবেন চুপ তো?

-- নির্মাল্য সেনগুপ্ত

Tuesday, 1 May 2012

কোলাকথন (ও: ইন্ডিজের কোন বন্দর থেকে, ১৩ই এপ্রিল,২০১২)


সত্যজিত রায়ের জলসাঘর! মনে 'ড়ৈ? জমিদারী লাটে উঠেছে, একটা রূপোর থালাও আর ঘরে বেঁচে নেই,তবু শেষ মোহরটা কাঁসার থালায় বুড়ো ঘোরার পিঠে চাপিয়ে ভেট পাঠাচ্ছেন গ্রামের উঠতি বিত্তবান ব্যবসায়ী বাড়ীর উত্সবে। ভাংগবে তবু মচকাবে না। আলো জ্বলবে, বাঈজি নাচবে, বেলফুলের মালা কব্জিতে জড়ানো থাকবে,থেকে থেকে সুরার পাত্রে একটু চুমুক, খানদানী গায়িকা, বিখ্যাত নর্তকী, শরীর ছুঁতে হবে কোন মানে নেই, অনুষ্ঠান করাটাই জরুরী। ওটাই শান! অন্তিম শ্বাস অবশ্য বড়ই বেদনাবিধুর। বুড়ো ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে শেষ জমিদার বিশ্বম্ভর রায়ের মৃত্যু

অনেকদিনে আগে বাংলা বই দেখতাম। মাঠে তখন পর্দা টাংগিয়ে ঘোষণা করে ছবি দেখাত। তার আগে নরেন্দ্রপুরে এক এক শনিবার ছবি দেখাত। অমন ছবি আমি আর টিটো ছাড়া অনেকেই দেখেনি: কালীয়-দমন, গুরদাসের রামকৃষ্ণ, সিস্টার নিবেদিতা ইত্যাদি। ছুটিতে পাড়ায় আসলে কিছু মেঠো ছবির টানে দৌড়তাম।

একদিন রাতে .. ছবি শেষ হয়ে গেল। আমাদের পাড়ার টুলি কাউকে সাথে নিয়ে আসার পায়নি, জোর করে আমার সাথে ছবি দেখতে এসেছিল। ফেরার পথে শুনি গুণগুণ করে গান গাইছে .. ''যেতে দাও আমায় ডেকো না, কবে কি আমি বলেছি মনে রেখো না .. তুমি ভরে নিও বাঁশী সুর থেকে সুরে, আমি চলে যাব ওগো দূর থেকে দূরে তো জানতাম নতুন পল্লীর যিশুর সাথে ঘোরে! কি হল এই রাত দুপুরে? হঠাত ওর গলাটা এই আলো-আঁধারীর বাঁশঝাড়ের পাশে হাঁটতে হাঁটতে ভারী মিষ্টি লাগল। আর আমি হাঁটছি, কোন কথা নেই, আঁধার পুকুর পাড়, শুধু সুর ভাসছে কানে। আমার নামী, দামী স্কুল আছে কিন্তু গলায় সুর নেই; ওর দুটো জামাকাপড়ে সারা সপ্তাহ কাটে - দ্বাদশ মন্দিরকিন্তু গলায় দারুণ গান আছে। আমার ছুটি খুব শিগ্গিরই শেষ হয়ে যাবে। নরেন্দ্রপুরে ক্লাস টেন- pre-test আসবে। গানের মত আমিও চলে যাব - "ওগো দূর থেকে দূরে! সাথে নিয়ে যাব এই ছুটিতে ওই পথচলাটুকু, সারা জীবনের মত। আঁধারে মুখ তুলে চাইল .. আমি বোকার মত না বুঝে হঠাত লোক-দেখানো উচ্ছাসে হাততালি দিয়ে উঠলাম।

---- আবার কবে আসবি?
---- ক্লাস টেন শেষ হলে, একেবারে।
---- তুই খুব পড়াশোনায় ভাল, তাই না?
---- এই যা:! আমার শত্রূরাও অমন নিন্দে করে না।
---- আমার টেন হবে কি না জানি না।
---- কেন?
---- দাদা আছে, ভাই আছে, দিদি তো কলেজ বন্ধ করে দিল। মা আমাকেও সেলাই শিখতে বলেছে।
---- তুই গান গা টুলি। ঈস্, তোর মত গলায় সুর থাকলে "গীত গাতা চল" – হিরোর মত বাঁশী নিয়ে দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়ে ফেলতাম!
---- ছেলেদের সব হয়, যা চায় তাই করতে পারে। আমরা একটু এক্কা-দোক্কা, কিত্-কিত্, তারপর একটু শাড়ী-টারী 'ড়ে স্কুল, একটু ঘোরাঘুরি, তারপর সব শেষ। মানে, আর জানি না!
---- যিশু কি করছে এখন টুলি? (রাম, রাম! ছি: ছি:! মুখ ফসকে প্রশ্নটা বেরিয়ে গেল)
---- কি আবার করবে? ওর বাবা ওকে মামার কাছে দিল্লী পাঠিয়ে দেবে এই রবিবার। ব্যস্ আর কোনদিন ফিরবে কি না কে জানে!
--- তুই এখানে কি করছিস? দেখা করবি না?
---- এত রাতে?
একটু হাসল! কাটা কাটা মুখে টুলির হাসিটা দারুণ সুন্দর লাগল। ছোটবেলায় মাথায় হিম 'ড়ত; সেদিন যেন বুকে হিম 'ড়ল।
---- আর আমার সংগে দেখা করার সময় বার করতে পারবে না। বাড়ী ভরা আত্মীয়-স্বজন। চলে যাবে বলে কান্না জুড়তে এয়েছে সব। যত ন্যাকামো!
আবার গেয়ে উঠল টুলি: “যেতে দাও আমায় ডেকো না”।

সেই রাতের 'রে টুলিকে আর দেখি নি।

স্মৃতির ভল্টে কোথাও এক রাতের পাঁচ মিনিটের টুলিও তোলা আছে !

অমিত

Monday, 2 January 2012

অমিতের লেখা ২৭শে ডিসেম্বর ২০১১



আজ ২৫শে ডিসেম্বর।

আলজিরিয়ার একটা বন্দরের একটু দূরে ভাসছি।বেশ কয়েকবছর হ’ল ২৫শে ডিসেম্বর(আমার মাতৃভাষায় বড়দিন) কেটে যাচ্ছে সাগরে ভেসে ভেসে। ২০০৭---এষ্টোনিয়ার সাগরে,২০০৮-তাইওয়ান থেকে সিঙ্গাপুরের পথে,২০০৯...সিঙ্গাপুর ইষ্টার্ন পেট্রলিয়াম অ্যাঙ্করেজে।২০১০, ওয়েষ্ট অ্যাফ্রিকা...আইভরি কোষ্ট...বেনিন বন্দর থেকে ৭০মাইল দূরে আটল্যান্টিকের বুকে,আর এইবার আলজিরিয়ার আর্জু বন্দরের ১৫/১৬মাইল দূরে। ভারী চমৎকার নাম-আর্জু।

জবরদস্ত গৃহযুদ্ধ চলছে আলজিরিয়ায়

নীলকান্তমণির মতো ঝকঝকে নীল দিনটা গেল আজ।সমুদ্র নীল,আকাশ নীল,নীল নির্জনে দাপটের রাজ শেষ করে সূর্যদেবও এবার বিদায়ের পথে।ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাঙা হাটের ফিসফিসানি..অস্তে গেল দিনমণি..আসিল গোধূলি।বিসর্জনের একপ্রস্ত সিঁদুরখেলা হ’ল আকাশে..কালকে বোধনের থালা হাতে জাগবে সমুদ্র...কাল সূর্য ফিরলেই নিজের সিথির সিঁদুরেূ আকাশের কপালে টিকা এঁকে দেবে...আজ সন্ধ্যার এটাই অঙ্গীকার

২৫শে ডিসেম্বর আমার দাদু(ঠাকুরদাদা)- মৃত্যুদিবস ভবানীপুর-এর রামরিক হাসপাতালে এইদিন বেলা একটা নাগাদ ১৯৭৮সালে বিপত্নীক আমার দাদু... ঠাকুমার কাছে চলে গেলেনএসেছিলেন সপত্নীক সপরিবারে ঢাকা থেকে,স্বর্গে চলে গেলেন কলকাতা থেকে পুত্রকন্যাদের রেখে জীবনযাত্রায় একপুত্রের মৃত্যুশোক- ভোগ করে গেলেন ছিলেন আপাদমস্তক বাঙালী...এবং বাঙাল যাঁরা সেদিন কাঁধ ছিলেন...তাঁরাও বোধহয় অনেকেই আজ নেইযে ডাক্তার ওখানে ভর্ত্তি করিয়েছিলেন...গতবছর Pancreas Cancer ভুগে তিনিও ৬৪বছর বয়সে মারা যান...জীবনের কাহিনী দুস্তরগতিতে সামনে এগিয়ে চলে অনেক মুখ হারিয়ে যায় প্রতি ঢেউয়ের মত কেবা কাকে মনে রাখে

দিনটা বাবা আমার অবিবাহিত কাকু,আমার নিঃসন্তান দুই পিসি আর পিসেমশাইরা মিলিত আমার বউ আমার ছেলেকে নিয়ে যায়পিসিরা- রাঁধে...আমার বউ সেজেগুঁজে বাগানে ফুল তোলে..ফল পাড়ে..ওর ওড়না হাওয়ায় ওড়ে..আমার ছেলে মোবাইলে এদিক ওদিক ছবি তোলে..ফেসবুকে পোষ্ট কোরে দেয়কত ছবি..কেক-এর ছবি সান্তাক্লজের ছবি নতুন জামায় ওর নিজের ছবি..আরবেশ ভাল দেখতে লাগছে টাইপেরওর মা- ছবি...

অন্যদের- আছে বাবা-কাকুর নিরুত্তাপ ছবি..রোগা হতে থাকা শীর্ণকায় ছোটপিসির ছবি,দুই পিসেমশাইর পাশাপাশি ছবি,রান্নাক্লান্ত বিশাল চশমার আড়ালে বড়পিসীর ছবি..নীচে আমার ছেলে লিখে দেয়...Christmas in our Farmhouse.এইসব লিখলে বন্ধুমহলেরেলাবাড়ে Farmhouseই বটে...সূর্য্যি পটে নামে,রাখাল ঘরেফেরে,,দুরন্ত বালকের দল ফুটবল অথবা ক্রিকেটখেলা সাঙ্গকরে হৈহৈ রবে বাড়ি ফেরে...সাইকেলের পাগলা ঘণ্টি বাজিয়ে টিউশন পড়তে যায় পড়ুয়ার দল..কিন্তু আমার বাবা কাকাকে ঘরেতোলার কথা মনে থাকে না...জীবনজুড়ে আমাদের অনেক জল্পনাকল্পনায়...এই বুড়োমানুষগুলো এখন শুধু Laughing Budhaর জীবন্ত ষ্ট্যাচু

আমি ফোন করি...কাকু তোলে..এমনিতে কানে কম শোনে কিন্তু কানে ফোন লাগিয়ে শুনতে পায়..ল্যাণ্ডলাইন। বেশ কয়েকহাজার মাইল দূর থেকে ভেসে আসে কাকুর বয়সজনিত সামান্য অসংলগ্ন আওয়াজ...”আমরা সবাই ভালো আছি...তুই ভালতো?”

এইটুকু যদি ভগবান আমার সারাজীবনের জন্যে রেকর্ড করে রেখে আমায় বার বার শোনাতে পারতেন...এই ওদের ভালোথাকা...ওদের থাকাটা..বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে..আরও কিছুকাল ভালো রেখো ওদের ঠাকুর...আমার হাতের শেষ জল পান থেকে ওদের বঞ্চিত কোরো না।

আমার জীবন কেটে যায় ফেসবুকনামক জানলা ওপারে উঁকি মেরে। ফেসবুক এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ...চীন আর ভারতের পরেই এর জনসংখ্যা। নাগরিক জীবনে অদ্ভুত অভিঘাত..what an impact. মনের ছায়া পথে বন্ধুর হাত ধরে চলা। আড্ডা মারার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ।কবিতে কবিতে কাব্যমূখর। বাদশাহ্ আকবরের পরিবর্তে রাজাধিরাজ মহাকালের সভা।কোথাও বীরবল কোথাও গালিব...কোথাও চালচিত্র ডোকরা..থেকে পিকাসো। কথার খই ফোটে আর তাতেই ফুটে ওঠে প্রেমের গোলাপ...অদ্ভুত সব abbreviation”LOL”,”P”.কখনো হাত বাড়ালেই বন্ধু কখনওবা মৃদু তিরস্কার...কোথাও অভিমান..আর অর্দ্ধাঙ্গিনীর অঙ্গনে প্রচুর অভিযোগ। সব নিয়ে ফেসবুকের দুনিয়া।

বুক কাঁপিয়ে দিয়ে যায় এক একটা পোস্ট। মনের বাগান থেকেও এক একদিন খবর আসে কারো কারো চলে যাওয়ার।অকষ্মাৎ শেষ পরিণতি...অপরিণত জীবনের অকল্পনীয় অবসান।পরমযত্নে তার ফেসবুকে ফিরে গিয়ে আর একবার চোখ বোলাই...কত ছবি স্কুল-কলেজ-কর্মস্থান..বেড়াতে যাওয়ার। কিছু ভাললাগা গান,কিছু সরস টিপ্পনী..কেউ বউ-মেয়ের সাথে লোনাভালায়..কেউ হাসব্যান্ড-এর সাথে সোফাসেট-এ হাসিমুখে।কাল ওরা ছিল,আজ ওরা নেই।হয়ত এখনো রয়ে গেল কারো কাছে কোনো ঝুলে থাকা...Friend’s request. জীবন কেন এরকম বেলা-তা’তে বালির গড়া সৌধ? বাতাসের এক দমকে,ঢেউয়ের একচুমুকে সব নিঃশেষে শেষ। বেশ’ত ছিল এই শরীর...রক্তমাংসে গড়া..চেতনা কেন দিলে..দিলে’ত মমতা কেন দিলে..এমন অশ্রু মেদূর স্মৃতিকাতরতা কেন দিলে..চলে যাওয়ার পর এই চেতনাবোধ কোথায় হারায় ঠাকুর। আমি চলে গেলে আমার এই অনুভূতি যা দিয়ে আমি আকাশের নীল-এ মেঘের ভেলায় ভেসেছি-তা কি সাগরের ঢেউ হয়ে কোনো শিশুর পদযুগল সন্তর্পণে ধুয়ে দিয়ে যাবে কোনো অচেনা সাগরপাড়ে...অথবা হাওয়া হয়ে মন হুহু করে বয়ে নিয়ে যাবে কোনো আনমনা কুমারীর সম্বিত

জানলায় তবুও চোখ রাখি। Twinkle Twinkle little starsএর মতো Little hearts কারো প্রোফাইলের লেখার পাশে পাশে ফুটে উঠছে।ভাইপো-ভাইঝিরা realationshipএ আবদ্ধ হচ্ছে। কোথাও Yamতুলছে...এদিকে মদন কোথাও চোখে কাজল পরিয়ে দিচ্ছে। যেদিন আবার কারোর যাবার খবর আসবে...মনে পড়বে লেখক অনিরুদ্ধ বোস-এর এই কটা লাইন

“.....আর র’বে

পশ্চাতে আমার নাগকেশরের চারা

ফুল যার ধরে নাই

.....আর র’বে

খেয়াতরীহারা “এপারের”ভালবাসা

বিরহ স্মৃতির অভিমানে

ক্লান্ত হয়ে ফিরিবে সে পশ্চাতের পানে”