Monday, 15 August 2011

মা রঞ্জনা আর স্বাধীনতা

লিখিনা কিন্তু পড়ি। অনেক সময়ে এই রোল টা ই ভাল লাগে। কলকাতায় আজকাল কাজের পাহাড় ~ কাজ ডিঙোতেই সময় ফুরিয়ে যায়। কাজের বোঝা আগেও ছিলনা তা নয় কিন্তু তখন ছিল ইটের পাঁজা। এখন পাহাড়। হাড়ে জোর কমেছে তাই গতি স্লথ। মনের আয়নায় এখনও কত রঙের ছোঁয়া লাগে তবু ছবি আঁকা হয়না। ক্যানভাস আছে, কল্পনা আছে ...কিন্ত অন্তরে আলো যেন নিষ্প্রভ।


কাল ১৫-ই অগসট গেল। সামগ্রীক ভাবে জাতির ইতিহাসে স্বনর্ময় দিন। তবে আমার কাছে বড় স্মৃতি-মেদুর। টুকরো স্মৃতির খণ্ড-হার। তবে স্মৃতির কড়িকাঠ আল্গা হয়ে আসছে। অনেক কথার পলেস্তরা খসে পড়ে গুড়ো গুড়ো হয়ে হারিয়ে গেছে


আমার মায়ের স্মৃতির কড়িকাঠে ঘুণ ধরেছিল। বিস্মৃতির হাওয়ায় ভাসতো অনেক স্মৃতির কণা, মা ছুঁতে পারতেন না। ফ্যল'ফ্যল করে চেয়ে রইতেন। স্মৃতিভ্রষ্ট পথচ্যুত ভ্রান্ত পথিকের মত। অন্তরে অসংবৃত অবরুদ্ধ চেতনা আর বাইরে মা আমার অব্যক্ত বিষাদের করুন পাষাণ প্রতিমা। বিসর্জনের আগেই অভিসর্জন~ জীবনের নিষঠুর প্রত্যাখ্যান।

মায়ের বাড়ি গেলাম এদিন। আমার মায়ের তালা বন্ধ বাড়ী। একদিন চোটপাটে বাড়ী মাথায় করে রাখতেন মা। আজ মায়ের অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালতেই মায়ের হাসি আমায় ছুঁয়ে গেল। ছবিতে মা হাসছেন। মায়ের বিছানা পরিপাটি করে পাতা। রঞ্জনা রোজ এসে ঝেড়ে মুছে যায় । মায়ের এলার্ম ঘড়ি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে
মায়ের মাথায় ্রামকৃষঞ রবিঠকুর আর Lord Jesus Christ ছবি। তারা যেমন আমার সুস্থ মা কে, আবার আমার রোগজীর্ণ মা কে স্মিত হাস্যে আস্বস্ত করতেন আজ আমার মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে তাই করে চলেছেন। আলমারি তে কাচা মায়ের শাড়ী আর maxi পাট করে রাখা। লম্বা শ্বাসে মায়ের গন্ধ বুক ভরে নেব ভাবলাম। মায়ের মত মায়ের গন্ধ ও হারিয়ে গেছে কোন সুদূরে। শুধু পড়ে আছে মায়ের ব্যবহারের টুকিটাকি। মাকে মনে পড়িয়ে।
রঞ্জনা এল মাইনে নিতে। ষাটের কাছে বয়স।আমার কাছে বায়না করলো এ পূজায় একটা fan কিনে দিতে। মায়ের আলমারি হাট করে খোলা দেখে কাপড়গুলো আবার ভাঁজ করতে লাগলো। এ দেশের মহিলা রা চুপচাপ কাপড় ভাঁজ এখনো করতে পারেনা। স্বাভাবিক ভাবেই এল মায়ের কথা। অন্য কথা যে কথা যুগে যুগে অভিভাবকহীন একাকী মহিলারা একান্তে বলতেন তাদের অন্তরঙ্গ সেবিকার সাথে।
বিকেল নামছে, মেঘের পাখায় ভর করে দিনের আলো আকাশ ছেড়ে তেপান্তরের মাঠের দিকে রওনা দিয়েছে। রঞ্জনার স্নৃতিচারণে মা 'র ঘর আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে...
তুমি বললে যাসনা খোকা ওরে
আমি বলি দেখোনা চুপ করে
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে
ঢাল তরোয়াল ঝন ঝনিয়ে বাজে
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে
শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা...
আমি আবৃত্তি করছি।। মা শুনছে, রবিঠাকুর, রামকৃষ্ণ সকলে শুনছে, সময়ের দেয়াল ভেঙ্গে গেছে।।স্বাধীনতা
এসেছে এনেছে মুক্তি।

3 comments:

  1. Moner ovibyakti sundar kore futiye tolar jonye notun kore dhonyobad! porey buk-ta chhyaat korey uthlo....eta to sabar belatei satyi!

    ReplyDelete
  2. twinkle twinkle little star.......
    আকাশ ভরা সূর্য তারা........
    এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়........

    ইতি
    এসেছিলে তবু আসনাই তুমি.........

    ReplyDelete
  3. অমিতের লেখাটা পড়ে গত ক'দিন যেন একরকম আচ্ছন্ন হয়ে আছি। সতেরোবছর প্রায়-অথর্ব হয়ে পড়ে থাকা মা আমার,এই'ত সেদিন চলে গেল!আমার খুব মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে রে। অবুঝ-এর মত- ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে দিদিকে দেখতে...

    ReplyDelete

Note: only a member of this blog may post a comment.