Thursday, 25 August 2011

আমার ঘরের দেয়াল

বাড়ী নারীর চেয়ে দুর্জ্ঞেয়। আমার এক বন্ধূ "হিজিবিজির" সুতোয় এমনি এক নকশা এঁকে গেছে এই blog-এ। নারী মন কোথায় পড়ে ধরা দেবতা ও জানেন না, আর বাড়ী কখন কোথায় কাকে ধরা দেয়, অথবা কেনই বা দেয়না, এই সভ্যতা তাই জানেনা।
রমাপদ চৌধুরী লিখেছিলেন "বাড়ি বদলে যায়"। তখন উনিও জানতেন না কি ভীষণ ভাবে বদলে যায়।
বাড়ি~ স্বপ্নপুরণের এক অপ্রতিম কাহীনির নাম, কখনও বা আশার আকাশে ভাসা চিলের ডানার মত অধরা স্বপ্নের নাম। বাড়ি থেকে বাসা, বাসা থেকে ভালবাসা থেকে কুটুম্বিতা। খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার ~ হৃদয়ের আকীর্ণ প্রসার। নিজের হোক অথবা ভাড়ার, বাড়িওয়ালার বাড়ি -ও কেন যে স্থান পায় অন্তরের অলিন্দ্যে~ আমরা কেউ জানিনা।

এখন বাড়ির নাম ফ্ল্যট। কোথাও সুপরিসর লিভিং রুম, প্রশস্ত হল নরম সোফাসেট, টার্কিশ কার্পেট ,মেঝেয় ফ্লোরবোর্ড, ডিম্বাকৃতি সেন্টার টেবিল, আধুনিক পেইন্টিং অরফিইয়াস কিংবা ইউরিদিয়াসের মুখ থেকে অবিরাম ঝরে পড়া ফোয়ারা, সাঁতার কাটা প্রজাপতি মাছ, concept ফার্নিচার, বাহারী ল্যম্প-শেড, পিকচার ল্যম্পের নীচে পরিতোষ সেন অথবা রামকিংকর বেইজ ~আজকাল মমতা ব্যনার্জী কিংবা শুভাপ্রসন্ন ও হেভি চলছে। অবশ্য CM মমতার limited Edition পাওয়ার চেয়ে গণেশ পাইন পাওয়া অনেক সহজওভেন ডিশ ওয়াসার এল ই ডি টিভি এ তবে সহজলভ্য এবং অনেকের-ই আছে।


আরেক টা বাড়ি আগে হত। সেটা কারও কৃষ্ণনগর কারও মালদা কারও ঘোলসাপুর হতে পারে অথবা বকুলতলা, সবেদা বাগান, শীলপারা। সে বাড়িগুলোর furniture এ কোন আঁতেল কনসেপ্ট থাকতোনা
~ বাবারা চাকরীতে যেতেন, জ্যঠা কাকারা ও যেতেন , কারও মাও যেত। ফাস্ট স্লো সব খাবার মা ঠাকুমারা-ই বানাতেন। বাড়িতে মাংস আসার দিনক্ষণ দেখে খোলা হাওয়ার সাথে খুশি আসতো। নোট বুকের size-এর আয়নায় বড়দা অথবা ছোটকাকু গোঁফে শান দিত। দিদি পিসিরা খেলার ছলে চুল টেনে কান মুলে অতিষ্ঠ করে দিত~ আবার ওরাই না চাইতেই খোপ কাটা আচার লজেন্স মুখে জোর করে পুরে দিয়ে যেত। জীবন টা কেমন টক ঝাল মিষ্টি মিষ্টি ছিল। নগেন দাসের কারখানায় ন টার ভোঁ, বাবা যাবেন নাকে মুখে গুজে ১২ডি ধরতে। বাড়ি মোটেই ছিমছাম থাকত না। থেকে থেকে তাক অগোছালো হয়ে যেত।
ভদা ভদা কাঁসার বাসন, পিড়ি পেতে খাওয়া, শকরিকাটা বাসন তুলে রাখ পাকের ঘরে, মঙ্গলা দি এসে মাজবে
আজ জীবন অনেক ম্যনেজেবেল। মশা আরশুলা তখন ও ছিল এখন ও আছে । কিন্তু তখন ছিল শুধু ফ্লিট এখন hit থেকে শুরু করে টোট্যাল কিলিং রেঞ্জ। আমাদের এত কার্ড যে তাদের আদি ভৃগু ration Card লজ্জায় সামনে আসেনা। কোকিল ডাকতো, চড়াই আসতো, আবার জলঢোরা ভাম অথবা ফড়িং ও উড়ত। আজ তারা অনেকেই আসেনা। আগে স্রেফ চুনকাম হত দেয়ালে, দাগ পড়তো ফাটল ও ধরত। আজকাল দারুন hifi paint, দেয়াল থাকে ক্যনভাসের মত নিটোল। আজকের পেইন্ট না ফাটিয়ে তবুও ঘরে একটা জিনিস বড্ড বারবার ঢুকে পড়ে। ঘরের আনাচে কানাচে তার উপদ্রব নজরে পড়ে চোখ নয় মন খচখচ করে। এর নাম হল লোভ। পরাণরে শুধু পাওয়ার আকাঙ্খায় জীবন গেল জীবন ছুঁলাম কই?
~এই সপ্তাহে চলে যাব।










No comments:

Post a Comment

Note: only a member of this blog may post a comment.