Tuesday, 1 May 2012

কোলাকথন (ও: ইন্ডিজের কোন বন্দর থেকে, ১৩ই এপ্রিল,২০১২)


সত্যজিত রায়ের জলসাঘর! মনে 'ড়ৈ? জমিদারী লাটে উঠেছে, একটা রূপোর থালাও আর ঘরে বেঁচে নেই,তবু শেষ মোহরটা কাঁসার থালায় বুড়ো ঘোরার পিঠে চাপিয়ে ভেট পাঠাচ্ছেন গ্রামের উঠতি বিত্তবান ব্যবসায়ী বাড়ীর উত্সবে। ভাংগবে তবু মচকাবে না। আলো জ্বলবে, বাঈজি নাচবে, বেলফুলের মালা কব্জিতে জড়ানো থাকবে,থেকে থেকে সুরার পাত্রে একটু চুমুক, খানদানী গায়িকা, বিখ্যাত নর্তকী, শরীর ছুঁতে হবে কোন মানে নেই, অনুষ্ঠান করাটাই জরুরী। ওটাই শান! অন্তিম শ্বাস অবশ্য বড়ই বেদনাবিধুর। বুড়ো ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে শেষ জমিদার বিশ্বম্ভর রায়ের মৃত্যু

অনেকদিনে আগে বাংলা বই দেখতাম। মাঠে তখন পর্দা টাংগিয়ে ঘোষণা করে ছবি দেখাত। তার আগে নরেন্দ্রপুরে এক এক শনিবার ছবি দেখাত। অমন ছবি আমি আর টিটো ছাড়া অনেকেই দেখেনি: কালীয়-দমন, গুরদাসের রামকৃষ্ণ, সিস্টার নিবেদিতা ইত্যাদি। ছুটিতে পাড়ায় আসলে কিছু মেঠো ছবির টানে দৌড়তাম।

একদিন রাতে .. ছবি শেষ হয়ে গেল। আমাদের পাড়ার টুলি কাউকে সাথে নিয়ে আসার পায়নি, জোর করে আমার সাথে ছবি দেখতে এসেছিল। ফেরার পথে শুনি গুণগুণ করে গান গাইছে .. ''যেতে দাও আমায় ডেকো না, কবে কি আমি বলেছি মনে রেখো না .. তুমি ভরে নিও বাঁশী সুর থেকে সুরে, আমি চলে যাব ওগো দূর থেকে দূরে তো জানতাম নতুন পল্লীর যিশুর সাথে ঘোরে! কি হল এই রাত দুপুরে? হঠাত ওর গলাটা এই আলো-আঁধারীর বাঁশঝাড়ের পাশে হাঁটতে হাঁটতে ভারী মিষ্টি লাগল। আর আমি হাঁটছি, কোন কথা নেই, আঁধার পুকুর পাড়, শুধু সুর ভাসছে কানে। আমার নামী, দামী স্কুল আছে কিন্তু গলায় সুর নেই; ওর দুটো জামাকাপড়ে সারা সপ্তাহ কাটে - দ্বাদশ মন্দিরকিন্তু গলায় দারুণ গান আছে। আমার ছুটি খুব শিগ্গিরই শেষ হয়ে যাবে। নরেন্দ্রপুরে ক্লাস টেন- pre-test আসবে। গানের মত আমিও চলে যাব - "ওগো দূর থেকে দূরে! সাথে নিয়ে যাব এই ছুটিতে ওই পথচলাটুকু, সারা জীবনের মত। আঁধারে মুখ তুলে চাইল .. আমি বোকার মত না বুঝে হঠাত লোক-দেখানো উচ্ছাসে হাততালি দিয়ে উঠলাম।

---- আবার কবে আসবি?
---- ক্লাস টেন শেষ হলে, একেবারে।
---- তুই খুব পড়াশোনায় ভাল, তাই না?
---- এই যা:! আমার শত্রূরাও অমন নিন্দে করে না।
---- আমার টেন হবে কি না জানি না।
---- কেন?
---- দাদা আছে, ভাই আছে, দিদি তো কলেজ বন্ধ করে দিল। মা আমাকেও সেলাই শিখতে বলেছে।
---- তুই গান গা টুলি। ঈস্, তোর মত গলায় সুর থাকলে "গীত গাতা চল" – হিরোর মত বাঁশী নিয়ে দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়ে ফেলতাম!
---- ছেলেদের সব হয়, যা চায় তাই করতে পারে। আমরা একটু এক্কা-দোক্কা, কিত্-কিত্, তারপর একটু শাড়ী-টারী 'ড়ে স্কুল, একটু ঘোরাঘুরি, তারপর সব শেষ। মানে, আর জানি না!
---- যিশু কি করছে এখন টুলি? (রাম, রাম! ছি: ছি:! মুখ ফসকে প্রশ্নটা বেরিয়ে গেল)
---- কি আবার করবে? ওর বাবা ওকে মামার কাছে দিল্লী পাঠিয়ে দেবে এই রবিবার। ব্যস্ আর কোনদিন ফিরবে কি না কে জানে!
--- তুই এখানে কি করছিস? দেখা করবি না?
---- এত রাতে?
একটু হাসল! কাটা কাটা মুখে টুলির হাসিটা দারুণ সুন্দর লাগল। ছোটবেলায় মাথায় হিম 'ড়ত; সেদিন যেন বুকে হিম 'ড়ল।
---- আর আমার সংগে দেখা করার সময় বার করতে পারবে না। বাড়ী ভরা আত্মীয়-স্বজন। চলে যাবে বলে কান্না জুড়তে এয়েছে সব। যত ন্যাকামো!
আবার গেয়ে উঠল টুলি: “যেতে দাও আমায় ডেকো না”।

সেই রাতের 'রে টুলিকে আর দেখি নি।

স্মৃতির ভল্টে কোথাও এক রাতের পাঁচ মিনিটের টুলিও তোলা আছে !

অমিত

1 comment:

  1. পড়লাম,কি লিখবো জানি না। প্রাণছুঁয়ে গেল।

    ReplyDelete

Note: only a member of this blog may post a comment.